ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ কে গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ বলা হয়ে থাকে। সারাবিশ্ব ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য চার বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। বিশ্বব্যাপী প্রায় সব দেশেই এই খেলার কমবেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সময় সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও উত্তেজনা শুরু হয়। আকাশ ভর্তি হয়ে যায় পছন্দশই দেশের পতাকাতে।
সূচীপত্র
আজকের নিবন্ধে আমরা ফিফার ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাস,ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশসমূহ ও চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দল,ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ এর পুরস্কার,ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ মাসকট,ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ এর রেকর্ড,এক নজরে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ ও পুরষ্কার সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাস । History of the FIFA World Cup
ফিফার পূর্ন নাম হচ্ছে ফেদেরাসিওঁ অ্যাঁতের্নাসিওনাল্ দ্য ফুৎবল্ আসোসিয়াসিওঁ মানে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি চার বছর পরপর ফিফার তত্ত্বাবধানে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । ফিফা বিশ্বকাপের শুরুটা মূলত ১৯৩২ সালের অলিম্পিকে ফুটবল খেলাকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে। ১৯৩২ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে আমেরিকাতে ফুটবল তেমন একটা জনপ্রিয় খেলা না হওয়ার কারণেই মূলত ফুটবল খেলাকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সেই থেকে ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে বিশ্বকাপ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশসমূহ ও চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দল
১৯৩০ সাল থেকে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত এ পর্যন্ত সকল খেলার সাল,আয়োজক,চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ হয়েছে সকল তথ্য নিচের ছকে দেওয়া হলো।
সাল | আয়োজক | চ্যাম্পিয়ন | রানার্স আপ |
---|---|---|---|
১৯৩০ | উরুগুয়ে | উরুগুয়ে | আর্জেন্টিনা |
১৯৩৪ | ইতালি | ইতালি | চেকোস্লোভাকিয়া |
১৯৩৮ | ফ্রান্স | ইতালি | হাঙ্গেরি |
১৯৫০ | ব্রাজিল | উরুগুয়ে | ব্রাজিল |
১৯৫৪ | সুইজারল্যান্ড | পশ্চিম জার্মানি | হাঙ্গেরি |
১৯৫৮ | সুইডেন | ব্রাজিল | সুইডেন |
১৯৬২ | চিলি | ব্রাজিল | চেকোস্লোভাকিয়া |
১৯৬৬ | ইংল্যান্ড | ইংল্যান্ড | পশ্চিম জার্মানি |
১৯৭০ | মেক্সিকো | ব্রাজিল | ইতালি |
১৯৭৪ | জার্মানি | পশ্চিম জার্মানি | নেদারল্যান্ড |
১৯৭৮ | আর্জেন্টিনা | আর্জেন্টিনা | নেদারল্যান্ড |
১৯৮২ | স্পেন | ইতালি | পশ্চিম জার্মানি |
১৯৮৬ | মেক্সিকো | আর্জেন্টিনা | পশ্চিম জার্মানি |
১৯৯০ | ইতালি | পশ্চিম জার্মানি | আর্জেন্টিনা |
১৯৯৪ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ব্রাজিল | ইতালি |
১৯৯৮ | ফ্রান্স | ফ্রান্স | ব্রাজিল |
২০০২ | জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া | ব্রাজিল | জার্মানি |
২০০৬ | জার্মানি | ইতালি | ফ্রান্স |
২০১০ | দক্ষিণ আফ্রিকা | স্পেন | নেদারল্যান্ড |
২০১৪ | ব্রাজিল | জার্মানি | আর্জেন্টিনা |
২০১৮‘ | রাশিয়া | ফ্রান্স | ক্রোয়েশিয়া |
২০২২ | কাতার | আর্জেন্টিনা | ফ্রান্স |
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ এর পুরস্কার সমূহ
বিশ্বকাপে দলগত অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য বেশকিছু পুরস্কার রয়েছে সেসব পুরস্কারের নাম ও পাওয়ার যোগ্যতা নিচে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে।
- অ্যাডিডাস গোল্ডেন বুটঃ সর্বোচ্চ সংখ্যক গোলদাতাকে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। ১৯৩০ সাল থেকেই এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে গোল্ডেন বুটই দেওয়া হলেও বর্তমানে সিলভার বুট এবং ব্রোঞ্জ বুটও দেওয়া হয়।
- অ্যাডিডাস গোল্ডেন বলঃ সেরা খেলোয়াড়কে অ্যাডিডাস গোল্ডেন বল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৮২ থেকে এই পুরস্কারের প্রচলন হয়। পরবর্তীতে সিল্ভার বল ও ব্রোঞ্জ বলও দেওয়া হয়।
- গোল্ডেন গ্লাভসঃ ১৯৯৪ সাল থেকে সেরা গোলরক্ষককে দেওয়া হয় এই পুরস্কার।
- শ্রেষ্ঠ উদীয়মান খেলোয়াড়ঃ ২০০৬ সাল থেকে অনুর্ধ্ব ২১ বছর বয়সী সেরা খেলোয়াড়কে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
- ফেয়ার প্লে ট্রফিঃ যারা ফেয়ার-প্লে অর্থাৎ মার্জিত খেলার মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে সক্ষম হয় তাদেরকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।
- ম্যান অফ দ্যা ম্যাচঃ প্রতি ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স করা খেলোয়াড়কে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ মাসকট
১৯৬৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সকল ফুটবল বিশ্বকাপের মসকটের নাম নিচের ছকে সাল অনুযায়ি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সাল | মাসকট |
১৯৬৬ | ওয়ার্ল্ড কাপ উইলি |
১৯৭০ | জুয়ানিতো |
১৯৭৪ | টিপ অ্যান্ড ট্যাপ |
১৯৭৮ | গাওচিতো |
১৯৮২ | নারানজিতো |
১৯৮৬ | পিকু |
১৯৯০ | সিয়াও |
১৯৯৪ | স্ট্রাইকার |
১৯৯৮ | ফুটিক্স |
২০০২ | আতো, কাজ ও নিক |
২০০৬ | ষষ্ঠ গোলিও ও পাইল |
২০১০ | জাকুমি |
২০১৪ | ফুলেকো |
২০১৮ | জাবিভাকা |
২০২২ | লা-ইব |
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ এর রেকর্ড সমূহ
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ খেলার সময় রেকর্ড অর্জনের সকল তথ্য নিচে পেয়ে যাবেন।
- বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণকারী দল ব্রাজিল, এ অবধি আয়োজিত ২১ টি আসরের সবগুলো আসরেই তারা অংশগ্রহণ করেছে। এই বিরল খ্যাতি লাভ করা একমাত্র দল ব্রাজিল।
- সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জয়ী দলের নামও ব্রাজিল। মোট ৫ বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে ব্রাজিল।
- বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে জার্মানি। এ পর্যন্ত মোট ১০৬ ম্যাচ খেলেছে দেশটি।
- বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলা দলও জার্মানি, মোট ৮ বার ফাইনাল খেলতে সক্ষম হয়েছে তারা।
- সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ী দলও জার্মানি, এ পর্যন্ত মোট ৭৬ টি ম্যাচ জিতেছে তারা।
- বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা দল মেক্সিকো। এ পর্যন্ত ২৫ টি ম্যাচ হেরেছে তারা।
- এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করা দল ব্রাজিল। মোট ২২৯ বার তারা প্রতিপক্ষের জালে বল প্রবেশ করাতে পেরেছে।
- বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দল জার্মানি, মোট ১২১ গোল হজম করতে হয়েছে তাদের।
- সবচেয়ে বেশিবার একটানা ফাইনাল খেলেছে ব্রাজিল ও জার্মানি। দুই দলই টানা তিনবার ফাইনাল খেলেছে।
- বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি টানা ম্যাচ জয় করেছে ব্রাজিল। টানা ১১ ম্যাচ জেতার অনবদ্য রেকর্ডের মালিক তারা।
- সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত দলটিও ব্রাজিল। টানা ১৩ ম্যাচ অপরাজিত ছিল তারা।
- খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন পেলে। মোট তিনবার বিশ্বকাপ জয় করার সৌভাগ্য হয়েছে তার।
- বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা, মোট ১৬ ম্যাচ খেলেছেন অধিনায়ক হিসেবে।
- বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হচ্ছেন পশ্চিম জার্মানির খেলোয়াড় মিরোস্লাভ ক্লোসা, মোট ১৬ টি গোল করেছেন তিনি।
- সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড় মোট তিন জন। মেক্সিকান খেলোয়াড় আন্তোনিও ক্যারবাজাল, ইতালিয়ান খেলোয়াড় জিয়ানলুইজি বুফন এবং জার্মানির লোথার ম্যাথিউস। প্রত্যেকে ৫ বার করে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন।
- বিশ্বকাপে সবচেয় দ্রুততম গোলদাতা তুরস্কের খেলোয়াড় হাকান শুকুর। ২০০২ সালে কোরিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে খেলা শুরুর মাত্র ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোল করেন তিনি।
- খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন দুইজন। ব্রাজিলের মারিও জাগালো ও জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
এক নজরে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ ও পুরষ্কার সমূহ
- চ্যাম্পিয়ন : আর্জেন্টিনা
- রানার্সআপ : ফ্রান্স
- তৃতীয়স্থান : ক্রোয়েশিয়া
- চতুর্থস্থান : মরক্কো
- গোল্ডেন বল : লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
- গোল্ডেন বুট : কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)
- গোল্ডেন গ্লাভস : এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (আর্জেন্টিনা)
- বিশ্বকাপের সেরা তরুণ তারকা : এনজো ফের্নান্দেজ (আর্জেন্টিনা)
- বিজয়ী আর্জেন্টিনার পুরস্কার মূল্য : ৪২ মিলিয়ন ডলার (৪ কোটি ২০ লক্ষ ডলার)
- রানার্স আপ ফ্রান্সের পুরস্কার মূল্য : ৩০ মিলিয়ন ডলার (৩ কোটি ডলার)
- শেষ ১৬ রাউন্ড: প্রতি দল ১.৩ কোটি ডলার।
- কোয়ার্টার ফাইনাল: প্রতি দল ১.৭ কোটি ডলার।
- চতুর্থ স্থান: ২.৫ কোটি ডলার।
- তৃতীয় স্থান: ২.৭ কোটি ডলার।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ এর চ্যাম্পিয়ন দল কোনটি?
২০২২ সালের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ কাতার এর চ্যাম্পিয়ন দল আর্জেন্টিনা।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ এর খেলায় গোল্ডেন বল কে পেয়েছে?
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ এর খেলায় গোল্ডেন বুট কে পেয়েছে?
কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ এর খেলায় গোল্ডেন গ্লাভস কে পেয়েছে?
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (আর্জেন্টিনা)।
কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে সেরা তরুন ফুটবলারের নাম কি?
এনজো ফের্নান্দেজ (আর্জেন্টিনা)।
আজকের ”ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের আদ্যপান্ত “ নিবন্ধটি আপনাদের কেমন লেগেছে আশা করবো ভালই লেগেছে । তথ্যে ভুল পরিলক্ষিত হলে কমেন্টে জানাতে পারেন।এমন আরো সাধারন জ্ঞান জানতে আমাদের সাইট নিয়মিত ভিজিট করার আমন্ত্রন রইলো।ধন্যবাদ