বর্তমানে বাংলাদেশে এক আতঙ্কের নাম বাংলায় চন্দ্রবোড়া সাপ অথবা রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপ। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে, গত কিছুদিন যাবত বিষাক্ত রাসেল’স ভাইপার সাপের কামড়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রধান ৩ টি বিষাক্ত সাপ হলো গোখরা (কোবরা), কেউটে (ক্রেইট) এবং চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার।
সূচীপত্র
রাসেল’স ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। এটি মূলত ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে দেখা যায়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায়, বিশেষ করে নদীয়া, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও বাঁকুড়া জেলার গ্রাম অঞ্চলে ভয়ের অন্যতম কারণ। রাসেল’স ভাইপার বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রকৃতির সাপ আগে শুধুমাত্র রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ দেখা যেত যার ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল। প্রচলিত আছে এ সাপ কামড়ালে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার সাপ
চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার সবচেয়ে বিষাক্ত।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ মে, জুন এবং জুলাই এই তিন মাস চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশি দেখা যায়।
চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপ দেখতে মোটাসোটা তবে লেজ সরু হয়ে থাকে। মাথা ত্রিভুজাকার এবং ‘V’ আকৃতির সাদা রেখা আছে। শরীরের পৃষ্ঠতল বাদামী এবং বৃত্তাকার বা ডিম্বাকৃতির গাঢ় চিহ্নের তিনটি লম্বা সারি রয়েছে। সাপটির গায়ে ছোপ-ছোপ গোলাকার কালো দাগ থাকে।
চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীর লেজসহ সর্বোচ্চ ১৬৬ সেমি (৬৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে গড় প্রায় ১২০ সেমি (৪৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। দ্বীপে আকৃতি সাধারণত কিছুটা ছোট হয়ে থাকে। এটি বেশিরভাগ ভাইপারের চেয়ে সরু। নিচে চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার সাপ শারীরিক আকার দেওয়া হয়েছেঃ
- মোট দৈর্ঘ্য ১.২৪ মি (৪ ফুট ১ ইঞ্চি)
- লেজের দৈর্ঘ্য ৪৩০ মিমি (১৭ ইঞ্চি)
- ঘের ১৫০ মিমি (৬ ইঞ্চি)
- মাথার প্রস্থ ৫১ মিমি (২ ইঞ্চি)
- মাথার দৈর্ঘ্য ৫১ মিমি (২ ইঞ্চি)
রাসেল’স ভাইপারের এন্টিভেনম
বিষধর সাপ গুলোর মধ্যে এন্টিভেনম নিতে হয় গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি অন্যথায় রুগী মারা যেতে পারে। রাসেল’স ভাইপার কামড়ালে ১০০ মিনিটের মধ্যে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।
এন্টিভেনাম সাপের বিষ ধ্বংস করতে পারে। শুধু সাপের বিষ ধ্বংস করতেই এন্টিভেনম ব্যবহৃত হয় না অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণির বিষ ধ্বংস করতেও এন্টিভেনাম ব্যবহৃত হয় যেমন- ব্লাক উইডো মাকড়শা, জেলিফিশ, মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি।
এন্টিভেনাম এর প্রকারভেদ ও কার্যকরিতার উপর ভিত্তি করে এন্টিভেনাম ২ প্রকার যথা- মনোভ্যালেন্ট এন্টিভেনাম ও পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনম।
- মনোভ্যালেন্ট এন্টিভেনামঃ এন্টিভেনম শুধু একটি প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর তাকে মনোভ্যালেন্ট এন্টিভেনম বলে।
- পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনামঃ এন্টিভেনম একাধিক প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর তাকে পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনম বলে।
এছাড়াও আরো ভিবিন্ন ঔষধ বাজারে পাওয়া যায় তার মধ্যে কিছু ঔষধের নাম নিছে দেওয়া হলঃ
- CroFab – ক্রফ্যাব
- antivenin (crotalidae) polyvalent
- Anavip – অনভিপ
- Antivenin Polyvalent – অ্যান্টিভেনিন পলিভ্যালেন্ট
- antivenin (Micrurus fulvous) অ্যান্টিভেনিন (মাইক্রোরাস ফুলভিয়াস)
চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার সাপের ছবি
চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপটি চেনার জন্য কিছু ছবি দেওয়া হলোঃ-
প্রিয় পাঠক, চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপ নিয়ে অনেক আতঙ্কে আছেন। অনেকে এমন ভাবছেন যে চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপে কামড়ালে বাঁচা যায় না কিন্তু কথাটি এমন নয় সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে মানুষ বেঁচে যায়। সরকারি হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া/রাসেল’স ভাইপার (Russell’s Viper) সাপের এন্টিভেনম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ আশ্বস্ত করেছে। ধন্যবাদ